দুই মেরুতে অবস্থান
উখিয়া -টেকনাফে বিএনপির পাশে নেই জামায়াতে ইসলামী
আওয়ামী স্বৈরশাসকের পতনের পর বিএনপির পাশে থাকছে না দীর্ঘদিনের মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগ বিহীন রাজনৈতিক মাঠে এখন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী মাঠ দখলে মরিয়া। জুলাই বিপ্লবের আগে বছরজুড়ে নানা কর্মসূচির পর সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। সেইসঙ্গে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা যৌথ রুপরেখা ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই কর্মসূচি ঘোষণার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য দল ও জোট। বিএনপি-জামায়াতসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দল সরকার বিরোধী আন্দোলনের চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছার আগেই একদফা ঘোষণায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিনে ঢাকায় বড় জমায়েত করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের প্রতিবাদের কথা বলে ঢাকাসহ সারা দেশে শান্তি সমাবেশ করতো দলটি। বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের সমাবেশকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মনে দেখা দিত নানা আশঙ্কা। সেই শঙ্কা প্রশমনে মাঠে থাকতো আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সাথে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থাকতো প্রশাসন। বিগত সাড়ে পনেরো বছর বিএনপি-জামায়াত বড় জমায়েতের মধ্য দিয়ে রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করেছে। সরকার পতনের তাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। কিন্তু বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের সীমাহীন নির্যাতন জেল-জুলুমের যে স্টীম রুলার চালি
ছে তা ইতিহাসে বিরল। সেই সময়কাল আওয়ামী লীগের নেতারা বলতো সব রকম আশঙ্কা প্রশমনের জন্যই আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ। অতীতে বিএনপি-জামায়াত সমাবেশের নামে অনেক নাশকতা করেছে। হেফাজতের সমাবেশে অনুপ্রবেশ করে নাশকতা করেছে। ফলে বিএনপি-জামায়াতের সভা-সমাবেশ বা যে কোনো কর্মসূচিতে জনগণের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়। তারা যেন কোনো ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য আওয়ামী লীগ সতর্ক দৃষ্টি রাখতো। অশান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা করলে যথাযথ জবাব দেওয়া হবে এমনটি বলতেন তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। দেশের মানুষ স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারলেও ঘৃণা করতো চরমভাবে। সেই সময় ছিল অস্থির এক বাংলাদেশ। বিএনপি-জামায়াত বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতিকে আশান্বিত, এবং উজ্জীবিত করে আন্দোলন আরো শক্তিশালী বেগবান হয়ে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে দলগুলো। কোন অবস্থাতেই আওয়ামী লীগকে হটাতে পারেনি। অবশেষে ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী স্বৈরশাসনের শোচনীয়ভাবে পরাজয় ঘটে। সর্বক্ষেত্রে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দেশের জনগণ। ৫ আগস্টের পর কক্সবাজার জেলার অন্যতম সংসদীয় আসন উখিয়া-টেকনাফ। কক্সবাজার-৪ এর এই ভাগ্যবান আসনটিতে ইতিমধ্যে প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উখিয়া-টেকনাফে দুই প্রধান দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী গ্রামের তৃণমূল ওয়ার্ড পর্যায়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে দুই রাজনীতিতে বইছে উত্তপ্ত নির্বাচনি হাওয়া। উখিয়া-টেকনাফে বিএনপি-জামায়াতের সভা-সমাবেশ ও শোডাউন ঘিরে রাজনীতি অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেখা দিয়েছে উৎসাহ উদ্দীপনা। চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা বিশ্লেষণ। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। এখানকার বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী প্রায় চুড়ান্ত। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ৪ বারের সাবেক সাংসদ ও হুইফ কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী এবং জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন কক্সবাজার জেলা জাময়াতের আমীর ও টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছ্যুক টেকনাফের এক আওয়ামী লীগ নেতা পৌর কমিশনার বলেন, উখিয়া টেকনাফে মূল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কতৃত্ব ছিল না। এখানে ছিল বদি লীগ। আওয়ামী শাসনামলে কোন গণতন্ত্র ছিল না। বদির কথায় সব হতো। তাইতো দলের আজ এই অবস্থা। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আলোচনায় তিনি বলেন, টেকনাফ পৌর এলাকায় বিএনপির চাইতে জামায়াতের অবস্থান অনেক ভালো। কারণ জামায়াত চাঁদাবাজি বা অন্যায় কোন কাজে জড়িত নেই। এটা স্বীকার করতে হবে। আওয়ামী লীগ যে কারণে জনগণের কাছে পতিত স্বৈরশাসক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ঠিক একই কায়দায় বিএনপি ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন সেক্টরে উখিয়া-টেকনাফে এক রাম রাজত্ব কায়েম করেছে। যা বিএনপির মতো এত বড় রাজনৈতিক দলের জন্য শোভনীয় নয়। সেই ক্ষেত্রে জামায়াতকে মানুষ পছন্দ করছে। পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম, গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিএনপির নাম দিয়ে যারাই গত চার মাসে বালুর মহাল, বাজার ও পরিবহন সেক্টরসহ বিভিন্নভাবে চাঁদাবাজি করেছে তা মানুষ ভালভাবে দেখেনি সময়ে জনতা তার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভূল করবে না। জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির শাহজাহান চৌধুরী একজন ক্লীন ইমেজের সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। উখিয়া-টেকনাফে তিনি ছাড়া অন্য কেউ কল্পনা করাও ভুল হবে। জামায়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে জামায়াতে ইসলামী একটি সু-সংহত ও আদর্শিক দল এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে জাতীয় নির্বাচনে শাহজাহান চৌধুরীকে টপকিয়ে যাবে এটা সম্ভব নয়। উখিয়া-টেকনাফে শাহজাহান চৌধুরীর বিকল্প নেই। উখিয়া উত্তর পুকুরিয়া গ্রামের রেজাউল করিম বলেন, জুলাই বিপ্লবে সুবেহ সাদেক হয়েছে মাত্র। সূর্যোদয় এখনো হয়নি। মানুষ আওয়ামীলীগ-বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখেছে বার বার। এবার পরিবর্তন দেখতে চায় জনগণ। বিশেষ করে বিগত সাড়ে পনেরো বছর ধরে ছাত্র ও তরুণ প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। এবার তারা আদর্শিক সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। যে যাই বলুক আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমানে সম্পূর্ণ দুই মেরুতে অবস্থান করছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।
এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারকে পতন ঘটাতে বিএনপির সাথে জামায়াতে ইসলামী জোটগতভাবে আন্দোলন করেছে। এখন ৫ আগস্টের পর প্রতিটি রাজনৈতিক দল স্বাধীনভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করছেন। সে ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থীতা ঘোষণা করে তাদের দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে তখন দেখা যাবে জামায়াত এককভাবে নির্বাচন করবেন নাকি জোটগতভাবে করবেন। জামায়াতের সাথে বিএনপির কোন শত্রুতা নেই। তাই জোটগত হবে না একক হবে তা সময়ে বলে দেবে। বিএনপি গত চার মাসে যেভাবে চাঁদাবাজি করেছে বলে যে মিথ্যা অপবাদ চালাচ্ছে সে ব্যাপারে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের কিছু সুবিধাভোগী জামায়াতের সাথে যুক্ত হয়ে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলার জন্য তারাই চাঁদাবাজি করছে। তবে বিএনপির কেউ চাঁদাবাজিসহ অপকর্মে লিপ্ত হলে তাদের ব্যাপারে তারেক জিয়া ও কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর কড়া নির্দেশনা রয়েছে সু-নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। এই দলের বিপুল ভোটার রয়েছে। উখিয়া-টেকনাফ বিএনপির ঘাঁটি। উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সোলতান আহমেদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শিক সংগঠন। এই সংগঠনের রোকন না হলে তাদের মূল্যায়ন করা হয়না এমন অভিযোগে তিনি বলেন, আমরা আগের সেই জামায়াত নেই। এখন আমরা প্রতিটি ঘরে ঘরে জামায়াতের দাওয়াত পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। পাশাপাশি আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আপাতত বিএনপির সাথে জোটগত নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা এককভাবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার সিদ্ধান মোতাবেক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
পাঠকের মতামত